photo

ব্যবসার জন্যে কি আসলেই ই- কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন

বাংলাদেশে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেনাবেচা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং জনপ্রিয় হচ্ছে, বিক্রেতারা নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছেন, সচেতন ক্রেতা সাধারণও ওয়েবসাইট নির্ভর ব্যবসাগুলোকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন। তবে অনেক উদ্যোক্তাই ব্যবসা বৃদ্ধির উদ্যেশ্যে ওয়েবসাইট বানান ঠিকই কিন্তু তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে না পারার কারণে হতাশ হয়ে পড়েন।

যে কোন ব্যবসার প্রথম পরিচয় তার নাম। একইভাবে অনলাইন জগতে আপনার ব্যবসার প্রথম পরিচয় আপনার ডোমেইন নেইম। যেই ডোমেইন এড্রেসে গেলে বা গুগলে সার্চ করলে খুঁজে পাওয়া যাবে আপনার ওয়েবসাইট তথা আপনার ব্যবসা। নিজের নামে নিজের ঠিকানায় ব্যবসা করাই আপনার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং যা আপনার ফেসবুক পেইজে বা মার্কেটপ্লেসের সাবডোমেইন বা অমুক নাম্বার স্টোর হিসেবে আপনি কখনোই পাবেন না। অনেকেই ফেসবুকে নিজের পণ্য অন্যের লিঙ্ক বা ব্র্যান্ডে মার্কেটিং করে থাকেন যা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়! নিজের ব্যবসার ব্র্যান্ড নিয়ে যদি এতটুকু সচেতন হয়ে থাকেন তবে আপনার প্রয়োজন নিজের ডোমেইনে একটি ওয়েবসাইট।

রিয়েল লাইফ ই-কমার্স হ্যাকস জানুন

আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা? আপনার পণ্য কি?
আপনার পণ্যের কাস্টমারগ্রুপ কারা সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কাস্টমারদের জিওগ্রাফিক (এলাকা) এবং ডেমোগ্রাফিক (বয়স, লিঙ্গ, আয়, শিক্ষা ইত্যাদি) সেগমেন্টেশন অনুযায়ী আপনার নিয়মিত বা সম্ভাব্য ক্রেতারা যদি বেশিরভাগ শহরকেন্দ্রিক তরুণ শিক্ষিত সমাজ হয় তাহলে ওয়েবসাইট বানানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। আর যদি অধিকাংশ ক্রেতা জেলাশহরের বাইরে বা গ্রামাঞ্চলে হয়ে থাকে তবে আপাতত তাদের জন্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করা চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ এই অংশের মধ্যে এখনো ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং পর্যাপ্ত অনলাইন শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।

আপনার যদি ইতিমধ্যে ভালো কাস্টমার বেইজ থাকে তারা হয়তো আপনাকে পণ্য ক্রয়ের সময় অনলাইনে পেমেন্ট যেমন কার্ড, মার্চেন্ট বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে আগ্রহী হতে পারে। বড় অ্যামাউন্টের কেনাকাটায় অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চায়, ইএমআই সুবিধা চায়। টাকা পয়সার লেনদেন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, এজন্য চাই সঠিক ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং ট্র্যান্সেকশন রিপোর্ট। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা পারসোনাল বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন, তবে তার কোন প্রোপার ট্রান্সেকশন ডকুমেন্ট আপনার বা ক্রেতার কাছে থাকেনা, এটি নির্ভরযোগ্য সমাধান নয়। এসব বিবেচনায় কাস্টমারকে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা দিতে গেলে এবং যথাযথ ট্রান্সেকশন ডকুমেন্টেড রাখতে হলে আপনার ওয়েবসাইট লাগবেই।

ফেসবুকের মাধ্যমে এখনো অনলাইন পেমেন্ট করা বা নেয়া সম্ভব না, আবার মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে করতে গেলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে অন্যের কাছে। পেমেন্ট গেইটওয়ে সহ নিজের ওয়েবসাইট থাকলে আপনি চাইলে দেশের বাইরে থেকেও অনলাইন পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন। তবে সবার আগে আপনাকে চিন্তা করতে হবে কাস্টমারগণ আদৌ অনলাইন বা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করবেন কিনা বা কি পরিমান অনলাইন ট্রান্সেকশন হতে পারে। সেই অনুযায়ী আপনি ওয়েবসাইট বানানো বা পেমেন্ট গেইটওয়ের সংযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আপনি ব্যবসা কতটুকু অটোমেট করতে চান?

ফেসবুক পেইজে ব্যবসা করা মানেই একটি সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল প্রসেস। পণ্যের ইনভেন্টরি থেকে শুরু করে কেনাবেচার হিসাব, ইনভয়েসিং, পেমেন্ট, অ্যাকাউন্টস, কাস্টমার ডেটাবেইজ, অর্ডার প্রসেস, নোটিফিকেশন সিস্টেম, সিআরএম, মার্কেটিং ইত্যাদি সবই কষ্ট করে সময় নিয়ে হাতে কলমে বা তৃতীয় কোন সফটওয়্যারের মাধ্যমে করতে হয়। কিন্তু ওয়েবসাইটের ব্যাকএন্ডে বা ম্যানেজমেন্ট টুলের মাধ্যমে এই ধরণের প্রসেসগুলো অটোমেটেড উপায়ে ম্যানেজ করা যায় খুব সহজেই, সবকিছু প্রোপারলি সমন্বয় করা যায়।

আপনি কি ওয়েবসাইট মার্কেটিংয়ের কৌশলগুলো জানেন?
ওয়েবসাইট চাইলে ওয়েবসাইটের মার্কেটিং (ফেসবুকের পণ্যের অ্যালবাম মার্কেটিং নয়) এবং কনভার্সন সম্পর্কে যতেষ্ট জ্ঞাণ থাকা চাই। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ওয়েবসাইট থাকার পরও এই কলাকৌশল না জানার কারণে ওয়েবসাইট থেকে কাঙ্খিত সাফল্য বা সেল পান না। আপনি যদি ‘ওয়েবসাইট থেকে সেল হয় না’ এই ধ্যানধারণায় থাকেন তাহলে হয় আপনাকে ফেসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসাতেই থাকতে হবে অথবা ওয়েবসাইট থেকে সেল করার কৌশল শিখে যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। কিভাবে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনতে হয় এবং সাইটে ভিজিটর এঙ্গেজ করতে হয় এগুলো জানতে হবে। এর বাইরেও ওয়েবসাইটের ভিজিটর ট্রাকিং, রিমার্কেটিং, লিড কালেকশন, এসইও, কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট, ব্লগিং ইত্যাদি সম্পর্কে অবশ্যই জানা থাকতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ ফেসবুক কেন্দ্রিক মার্কেটিং করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে ওয়েবসাইটে কনভার্শনের মার্কেটিং কলাকৌশল এবং এ্যাড টাইপ সম্পর্কে চর্চা থাকা চাই। ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি এবং পারফর্মেন্স বিচার করার নূন্যতম জ্ঞান থাকতে হবে। ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিটর এবং সেখান থেকে সেল জেনারেট করার জন্য নিয়মিত প্রোডাক্ট, কন্টেন্ট, রিভিউ এবং প্রমোশনের আপডেট করা খুবই জরুরী। অনলাইন ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে ওয়েবসাইট এবং ম্যানেজমেন্ট টুলের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য আপনাকে নিয়মিত সময় দিতে হবে, অনেক সময় এক্ষেত্রে বাড়তি লোকবলেরও প্রয়োজন হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতা বলে আপনি যদি এই ব্যাপারগুলোয় উদাসীন হোন তাহলে ওয়েবসাইট থেকে কখনোই কাঙ্খিত ফলাফল পাবেন না।

যেভাবেই ওয়েবসাইট বানান বা পরিচালনা করেন তার পাশাপাশি আপনাকে খরচ করতে হবে সাইটের এসইও করতে, কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট, ব্লগিং ইত্যাদিতে। সাথে নিয়মিত পেইড অনলাইন মার্কেটিংয়ের খরচ তো আছেই। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং এবং নিয়মিত সেল পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ্য, ধৈর্য রাখতে হবে এবং নিয়মিত বিনিয়োগ করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সবকিছু মিলিয়েই খরচ কমানো যায় যদি আপনি সময় দিয়ে কৌশলগুলো নিজেই রপ্ত করে নেন এবং বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা সহ টার্গেট সেট করে আস্তে আস্তে প্রয়োগ করতে থাকেন।